মূর্খের মুখোশ উম্মোচন: মূর্খের মুখোশ উম্মোচন করা জ্ঞানীর কাজ নয়, কিন্তু জ্ঞান অর্জন, জ্ঞানের প্রয়োগ ও জ্ঞানীর সৃষ্টিশীলতার পথে তারাই প্রধান বাধা। তাই মুর্খের ধর্ম সম্পর্কে জানলে তাদের এড়িয়ে চলা সহজ হবে। তবে আগে জেনে নেই মূর্খের সংজ্ঞাটা। মূর্খ হলো তারা যাদের স্কুল-কলেজ পাশের সনদ থাকতেও পারে, নাও পারে। কিন্তু তারা ক খ পড়তে-লিখতে পারলেও শিক্ষা ও জ্ঞান লাভের মৌলিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। আবার অনেকে পড়তে-লিখতে না পারলেও শিক্ষা, জ্ঞান, শিক্ষিত, জ্ঞানী- এসবের মূল্য বুঝে ও দেয়। উনারা কোনো ভাবেই মূর্খ নন। মূর্খের বিপরীত শব্দ জ্ঞানী, শিক্ষিত শব্দ নয়। অর্থাৎ অশিক্ষিত হলেই তিনি মূর্খ হয়ে যাবেন না। যিনি হুশ থাকার পরেও জীবনকে সত্য-সুন্দরের পথে চালাতে ব্যর্থ তিনিই মূর্খ। শিক্ষিত বা অশিক্ষিতের সাথে মূর্খের সম্পর্ক নেই। পড়তে না পারলে তিনি নিরক্ষর। কেবলমাত্র নিরক্ষরকে আমরা মূর্খ বলতে পারি না। একজন ব্যক্তি যখন মূর্খ হবেন না, তখনই তিনি পড়তে না পারলেও সব বিষয়ে তার মধ্যে সচেতনতা থাকবে।
অনেক সাক্ষর ব্যক্তিও জীবন রক্ষা, সম্পর্ক ও এর রক্ষা, ধর্ম, যাবতীয় মূল্যবোধ- এসব মৌলিক জীবনাচরণে ইতিবাচক হতে পারেনি। তা হলে পড়তে পেরেও তারা মূর্খ। মুর্খ চিনুন- তারা মুখে ফটফট করে জ্ঞানী সাজতে চায়। দুই চারটে শ্লোক বলে তাদের বিদ্যার জোর দেখায়। দুই চারটে কৌশলী কাজ করে তারা বুদ্ধির জোর খাটায়। এসবই মুর্খের ধর্ম। তারা জ্ঞান অর্জনকে যেমন ভয় পায়, তেমনি জ্ঞানীকে ভয় করে। তাদের এ ভয়টা তারা জ্ঞানীকে তুচ্ছ করার মধ্য দিয়ে আড়াল করতে চায়। কারণ তারা জানে যে জ্ঞান ও জ্ঞানীর কাছে আমরা মূল্যহীন। আর মুর্খ লোকেরা প্রচলিত জ্ঞানের বাইরে নিজস্ব বলয়ে এক নতুন জ্ঞানের পয়দা করে। এ জ্ঞান না ছিলো কোনো ধর্মে, না ছিলো কোনো বিদ্যার কালিতে, না ছিলো কোনো বুদ্ধিমানের মাথায়। তবুও তারা নিজের জানা-শোনার বলয়ে নিজেকে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ভাবতে পছন্দ করে। আদতে তারা বিদ্যান নয়। তারাও দুই-চারটে সার্টিফিকেট লাভ করতে পারে। তবে এ সার্টিফিকেট তাদের পুঁথিগত ব ক শিখেয়েছে বটে। তবে বিদ্যান করতে পারেনি। আর তাদের বিদ্যার অস্তিত্ব শুধু মুখের জোরেই। তাদের কাজে, ধর্মে, মননে তা অপ্রকাশিত।
সত্য ও সুন্দর কিতাবের জ্ঞান ও তার জোরে সৃষ্ট বিদ্যা-বুদ্ধি তাদের কাছে ছাইতুল্য। পড়তে না পারলে অন্তত পড়ার পাতায় কি আছে তা জানতে হবে। না হলেই মূর্খতা ঝেকে বসতে পারে। যারা কিতাবী জ্ঞান ছাড়াই জ্ঞানী হবার দাবিদার, তারা কোন্ কিতাব পড়ে জ্ঞান পেলো? তারা কি তাহলে দৈব শক্তির জোরে জ্ঞানী-বুদ্ধিমান? পারলে একটা ঐশ্বরিক কেরামতি করে দেখাক তো। তা না পারলে তাদের জ্ঞানের উৎস আসলে কোথায়? মূর্খ লোকেরা জ্ঞান ও বিদ্যার মুল্য যে বোঝে না তা কিন্তু নয়। তবে তারা জ্ঞানী ও বিদ্যানের মূল্য দিতে জানে না। এটাই তাদের ব্যর্থতা। তারা যদি এই ক্ষেত্রে ব্যর্থ না হতো তাহলে বুদ্ধিমান ও বিদ্যানের সংস্পর্শে তারা তাদের জীবন সংসারের অন্ধকার দূর করে এক ফোটা হলেও সত্যের দেখা পেতো। কিন্তু অহংকার তাদের সত্য ও সুন্দরের কাছে নত হতে দেয় না। মূর্খ জনেরে দাও জ্ঞানের আলো- এ সত্য আহ্বানে সাড়া দিয়ে জ্ঞানীর উচিত মূর্খের পিছনে সময় দেওয়া। তবে কোনো মূর্খ অহংকারী হলে তার পিছনে সময়, কথা, শ্রম ব্যয় সবই বৃথা হয়ে যাবে। আরো পেতে হবে তার চোপার ধাক্কা। তাই তার সঙ্গ থেকে দেহ ও মনকে সরিয়ে নেওয়া খুবই জরুরী। তা না করতে পারলে আপনার অর্জিত জ্ঞান, বুদ্ধিও আপনাকে আর ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পরলো না!
তারা বলে- “আমরা ডিগ্রি পাস করিনি। কিন্তু বিদ্যা-বুদ্ধি কম নেই”। এ কথা বলার মানে হলো তারা
শিক্ষা, শিক্ষিত লোক, তাদের কাজ ও সিদ্ধান্ত নিয়ে হিংসায় জ্বলে। এমন হিংসাই তাদের
মূর্খরূপে চিহ্নিত করেছে। মূলত হিংসুক ব্যক্তিই মূর্খ। অন্যদিকে অহংকার হলো মুর্খের ডিগ্রি। মূর্খ লোকেরা অহংকার বেশি করে। তাদের এই অহংকার
তাদের চোপায় প্রকাশ পায়। চোপা হলো মুখের চোয়াল। এই চোয়াল নাড়িয়ে তারা তাদের বিদ্যা-বুদ্ধির জোর প্রকাশ করে। যে অহংকার মুখে প্রকাশ
পায় তা মুর্খের। আর যে অহংকার অপ্রকাশিত থাকে তা বুদ্ধিমানের। বুদ্ধিমানের অহংকার
তাকে হিংসুক বানায় না। বরং এ অহংকার তাকে গর্বিত করে। এ গর্ব তার মুখে নয়, বরং বুকে। বুকের গর্ব নিজেকে চেনায়, জ্ঞানে-কর্মে ও সচেতনতায় তাকে বড় করে। আর মুখের
গর্ব একটা লোককে হিংসা চর্চা করা শেখায়। আবার যে বুদ্ধি মুখে প্রকাশ পায় তা মুর্খ লোকের আচার।
মুর্খ যা ভাবে তা মুখে বলে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে চায়। তারা খুব তাল পাকানো কথা বলে
লোকেদের বোঝাতে চায় যে আমরা জ্ঞানী। এই ধরণের বুদ্ধিচর্চা একমাত্র গন্ডমুর্খের
চরিত্রে শোভা পায়। আর জ্ঞানীর বুদ্ধি তার মুখে প্রকাশ পায় না। তা থাকে মনে, প্রকাশ পায় কৌশলে। প্রকাশ পায় কর্মে, ধর্মে ও আচারে। অর্থাৎ হিংসা, অহংকার ও বুদ্ধি- এসব মুখে প্রকাশ পেলে সে মুর্খ! মুর্খ চিনতে হলে চোপার জোর যার বেশি, তাকে চিনুন। তার থলেতে কিছু নেই। চোপা দিয়ে নিজেকে
জাহির করলেই সে তৃপ্ত। আর জ্ঞানী লোকেরা চোপায় কাবু। দুই চারটে কথায় তারা চোয়াল
ঠিকই নাড়ায়। তার চেয়ে বেশি তাদের কৌশলী বুদ্ধি নড়ে চড়ে। তাদের চোয়াল আত্মতৃপ্তির
খোরাক জোগায় না, জোগায় তাদের মন। তাই এটাই
স্পষ্ট- মূর্খের জোর চোপায়, জ্ঞানীর জোর মনে।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। তার কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। লেখকের কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- লেখকের কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন