বাপের বাড়ি যেতে খুব ইচ্ছে হয়!
একটা মেয়ে আঠারো-বিশ, পঁচিশ কিংবা
ত্রিশ বছর বাপের বাড়িতে লালিত-পালিত হবার পরে চিরদিনের জন্য চলে যায়
শ্বশুরবাড়িতে। তবে এই চলে যাওয়াই কি তার শেষ বিদায়? যে পিতা-মাতা তাকে গর্ভে ধারণ করেছেন, কত আদর ভালোবাসা দিয়ে লালন-পালন করেছেন, ধর্মকর্ম-লেখাপড়া শিখিয়েছেন, তারা কেনো এত কষ্ট করেছিলেন? এমন তো নয় যে তারা শ্বশুরবাড়িতে মেয়েকে দিবেন না বলে
কষ্ট করে বড় করেছেন কাছে রেখে দেবার জন্যে। বরং উপযুক্ত মানুষ করে শ্বশুর বাড়িতে
পাঠাবেন এটাও তাদের চাওয়ার মধ্যে ছিল। ভালো পাত্রের হাতে তুলে দিবেন, ভালো ঘরে মেয়েকে বিয়ে দিবেন, এটাই তারা চেয়েছিলেন। নারী হয়ে জন্ম নিয়েছে, মেয়েকে তো আর চিরদিন কাছে রাখা যাবে না! পরের বাড়িতে
পাঠাতেই হবে। কিন্তু এত আদরের কন্যাকে পাত্রস্থ করার পর তার অধিকার পুরোপুরি চলে
যায় স্বামীর হাতে। এটা সত্য!
তবে কি বিয়ে দেবার পর একটি মেয়ের উপর বাবা-মায়ের আর কোনোই অধিকার থাকে না? মেয়ের কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়া, তাকে ভালোবাসা দেওয়া, মেয়ের সংস্পর্শে কিছুটা সময় কাটানো, এমন কিছু অধিকার প্রত্যেকটা পিতা-মাতার রয়েছে। সেই অধিকারের ক্ষেত্রে অনেক
সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অন্যান্যরা। তারা তাদের বউকে
বাপের বাড়িতে যেতে দিতে চান না। অথচ মেয়ে তার বাবা-মায়ের দেখাশোনা করবে, তাদের কিছুটা সাহায্য সহযোগিতা করবে, তাদের পাশে কয়েকটা দিন থাকবে- এ বিষয়গুলো অর্জন করা যেনো
একটা নারীর জন্য অনেক কষ্টের। রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে সে- বাপের বাড়িতে
যাবে! বাবা-মা ও ছোট ভাই-বোন আর আপনজনদের সাথে কিছুটা সময় কাটাবে সে!
স্বামীদের বলবো- কয়েকটা দিন বাপের বাড়িতে তাকে রেখে আসা উচিত। সে বেড়াতে
গেলে বারবার তাকে ফিরে আসার জন্য চাপ না দেওয়া উচিত। সে যাতে তৃপ্তি সহকারে
কয়েকটা দিন বেড়াতে পারে। তবে সত্য কথা হল- মেয়েরা এমনই জনমদুখিনী এক জাতি, তারা বাপের বাড়ির হারানো দিনগুলোকে যেমন খুব মিস করে।
তেমনি স্বামী-সন্তানের সাথে চলমান দিনগুলোকেও তারা খুব মূল্য দেয়। তবুও বর্তমানকে
ফেলে তারা পিছনে ফিরে যেতে চায় না। অপরদিকে পুরুষেরা চায় স্ত্রীর সব স্বপ্ন হোক
তাকে কেন্দ্র করে, তার সন্তানদের
কেন্দ্র করে, তার বাবা-মাকে
কেন্দ্র করে, তার ঘর-সংসার ও
বাড়ি কেন্দ্র করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এই মেয়েটার ফেলে আসা দিনগুলো কি এ জীবনে
আর সে ফিরে পাবে না? ফিরে না পাক, পুরনো দিনের স্মৃতিময় স্থানগুলো কি সে সরেজমিনে ঘুরেও আসতে
পারবেনা?
বাপের বাড়িতে গেলেও তার মন থাকে শ্বশুর বাড়ির দিকে। শশুর বাড়ি ছেড়ে
দিনের-পর-দিন বাপের বাড়িতে থাকতে পারা যায় না। তাইতো ছোট ভাই-বোন ও মা-বাবাকে
ফেলে তারা স্বামীর কাছে ফিরে আসতে ব্যাকুল থাকে। বড় ভাই , বড় বোন যাদের আদরে-অনুশাসনে মেয়েটি বড় হয়েছে তাদের
ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে তাকে। যে বড় ভাই তার বোনটাকে কত ভালোবাসতো, কখনো সে আদর করত কখনোবা সে একটু শাসন করতো। যে ভাইটা চোখে
চোখে রাখতো তার ছোট বোনটাকে, আজ সেই ভাইয়ের হাতছাড়া হয়ে গেছে বোনটি। এই বলে তো বড় ভাইয়ের কোন দুঃখ
নেই! তবে তো তার একটাই ইচ্ছা বোনটা বাড়িতে থেকে একটু ভাইয়া বলে ডাকবে। সে বড়
ভাইকে খাবার বেড়ে খাওয়াবে। আবার বোনে-বোনে মিলে গল্প করবে অনেক রাত জেগে, গল্প হবে তাদের মায়ের সাথে। পিঠাপিঠি ভাই-বোনেরা মিলে একটু
হাসি-ঠাট্টা করবে। কিন্তু সে সুযোগটুকু আর কোথায়? বোধহয় চিরদিনের জন্য ভাই-বোনেদের সাথে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে!
আদরের ছোট ভাইটার সাথে কতো যে খুনসুটি চলতো, আপুটার পিছু পিছু থাকতো সে সারাক্ষণ। কোথায় ছোট্ট ভাইটা!
আর সেই ছোট্ট বোনটা-বা আজ কই! বাপের বাড়িতে গেলে ছোট বোনটা বলে, "আপু আর একটা দিন থেকে যা", আপু বলে- "না রে বোন, তোর ভাইয়ার খেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।" মা বলেন, "মা আজ থেকে যা, কাল যাস"। মেয়ে বলে, "মা, তোমার জামাই একা রান্না করে
খেতে পারে না, অফিস থেকে এসে ওর
অনেক কষ্ট হয়। আমার যেতেই হবে!" কেউ তাকে আর আটকে রাখতে পারে না। স্বামীর
ভালোবাসায় পাগল হয়ে সে ছুটে চলে আসে। এই হলো নারী, এই হলো আমাদের বউ। তার পরেও আমরা তাদের মূল্যায়ন করতে
পারিনা। তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসার মর্যাদা আমরা দিতে পারি না। কয়েকটা দিন বেড়াতে
যেতে দিতে চাই না। তবে উচিত হলো- বেড়াতে যাবার সুযোগ স্বামী নিজের ইচ্ছায় করে
দিবেন।
ইশ! মমতাময়ী মা একটা মেয়ের কত আপন! মেয়েটি তার মায়ের আঁচল ধরে বেড়ে
উঠেছে। শ্বশুরবাড়িতে চলে আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মা-ই ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী।
সেই সঙ্গীকে ফেলে চলে এসেছে স্বামীর বাড়িতে। আজ তার ইচ্ছে হয় খুব মায়ের কাছে
যেতে, মায়ের সেবা করতে, মাকে কয়েকটা দিন রান্না করে খাওয়াতে। ইচ্ছে হয়! কিন্তু
উপায় কি? অসুস্থ মায়ের
কোমরে খুব ব্যথা, কাজ করতে পারেন না।
ছোট ভাই-বোনদের রান্না করে খাওয়াতে দেরি হয় তার। মেয়েটি যদি কয়েকটা দিন ও
বাড়িতে থাকতে পারতো তাহলে ওদের মুখে খুব হাসি ফোটে। কিন্তু উপায় কি? স্বামীর বাড়ি ছেড়ে গেলেও হয়না, আবার যেতেও ইচ্ছা করে! আবার গেলে মাও তাকে বলেন, "যা মা, তুই চলে যা। আমি পারবো।" এই মা-ও চায়না মেয়ের এই থাকার জন্য তার
শ্বশুরবাড়ি কেউ কষ্ট পাক। বাপের বাড়ির কেউ তাকে আর রাখতে চায় না। এই হলো নারী!
এই হলো আমাদের মায়েরা, এই হলো
বউয়েরা!
আর বাবারা নিরব কান্না প্রকাশ করতে পারেন না। কলিজার টুকরো মেয়ে বাপের
বাড়িতে গেলে খুব আনন্দ হয় বাবার। সেই ছোট্টবেলার খুকি আজ অনেক বড় হয়ে গেছে।
বাবা তো দেখতে চায় সেই খুকি আজও তার ঘর দিয়ে ঘুর ঘুর করছে। কিন্তু খুকি তো আর
আসেই না! কিভাবে দেখবে বাবা তাকে? খুকি আসলে বাবা কি আনবেন বাজার থেকে, কি খেতে আবদার করতো মেয়ে ছোটবেলায়! "মা, কি খাবি?" অনেক সময় বৃদ্ধ বাবার হাতে টাকা থাকে না। মেয়ে-নাতি-নাতনি গেলে বাবারা পাগল
হয়ে যান। কিভাবে তাদের খাওয়াবেন, কিভাবে নাতনীদের আদর-আহ্লাদ মেটাবেন।
বাবা বলতে পারেন না- "মা আর কয়েকটা দিন থেকে যা।" বরং বাবা খুব জোর গলায় মেয়েকে বলেন, "এই যা চলে যা, দেরি করিস না। জামাইয়ের কষ্ট হচ্ছে।" আসলেই কি তিনি মন থেকে বলেন মেয়েকে চলে যেতে? কিছুতেই না। পুরুষ মানুষ তো মুখে একটু কঠিন তার ভাষা। অন্তর কোমল, তা কেউ বোঝেনা। বাবা তো চায় আদরের কন্যা তার অনেক দিন বেড়িয়ে যাক। কিন্তু সে চাওয়া পূরণ হবে না বাবার। বাবার পাতে আর খাবার তুলেও দেয় না মেয়ে। বাবার কাছে আর কোনো আবদারও করে না মেয়ে। বোধহয় মেয়েকে বড় করে ভুল করেছেন বাবা! কেনোনা চিরদিনের জন্য তাকে বিদায় করে দিতে হয়েছে। একদিন দুদিন এর বেশি আদরের কন্যা থাকেনা বাবার পাশে। এই হল কঠিন বাস্তবতা। আর এই নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি আমাদের স্ত্রীরা।
কিন্তু আমরা পুরুষেরা কি করি? স্বামী হয়ে স্বামীগিরি চালিয়ে যাই স্ত্রীর উপর। বুঝিনা তার মনের ভাষা।
বুঝিনা তার চাওয়া-পাওয়ার কথা। বিশেষ করে বাবার বাড়ি নিয়ে স্বামীরা অনেক ভুল
করে চলে। তাকে যেতে দিতে চায় না বাবার বাড়িতে। কয়েকটা দিন থাকার জন্য একটা
মেয়েকে কতো প্রেসার নিতে হয়। বাপের বাড়িতে দুটো দিন থাকার জন্য স্বামীকে কতবার
বলতে হয়, কত কথা বলে বলে
তাকে রাজি করাতে হয়। তবেই না স্বামীর অনুমতি মেলে। তাও মাত্র দুটো দিন। এর বেশি
নয়। "দুদিন পরে চলে আসবে কিন্তু", যেতে না যেতেই তার শুনতে হয় এই কথা। দুদিন পেরোতেই স্বামী ফোনের পর ফোন দিতে
থাকে। "চলে আসো, চলে
আসো"। হ্যাঁ, চলে আসবে সে!
প্রিয়তম স্বামীকে ছেড়ে বাপের বাড়িতে থাকা তার জন্য অনেক কষ্টকর ছিল। সে
প্রিয়তম স্বামীকে খুব মিস করেছে এ দুদিন। ঠিক বিষয়টা এরকমই। আমরা স্ত্রীর মনের
খবর বুঝতে চাই না। বাপের বাড়িতে গেলে যখন আমরা তাকে বারবার ফিরে আসতে বলি তখন সে
কষ্ট পায় না। সে জানে- "এই পুরুষটি আমায় খুব ভালোবাসে। আমায় ছাড়া এক রাতও
থাকতে পারে না। তাইতো সে বারবার ফিরে যেতে বলছে।" তাই তো ফিরেও আসে সে। এই
হলো আমাদের নারী, এই হল আমাদের বউ।
সে তার চিরচেনা বাবার বাড়িতে একটু যেতে চায়। ও বাড়ির প্রতিটি কামরা, প্রতিটি খাট, প্রতিটি আসবাবপত্র তার চিরচেনা। কত যত্নে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতো সে। ছোট
ভাই-বোন, মায়ের-বাবার কাপড়গুলো গুছিয়ে
রাখতো মেয়েটি। বাবা-মায়ের সাথে একই সাথে খেতে বসতো তাদের আদরের কন্যা। ছোট
ভাই-বোনদের সাথে কখনো ঝগড়া হতো। কতো কিছুই না হতো। নিত্য নতুন রান্না করে সবাইকে
খাওয়াতো সে। কখনোবা খাবার নিয়ে ভাই-বোনেদের মারামারি চলতো। বাড়িতে মেহমান আসত।
ছোটবেলায় কাজিনদের সাথে কত ঘুরাঘুরি কতকিছু কত আনন্দ! তার কিছুটা হয়তো এখনো
ওবাড়িতে অবশিষ্ট আছে। হয়তো সে যেতে পারলে সব আবার জেগে উঠবে। কিন্তু যাওয়া
হয়না, যাওয়া হবে না, গেলেও আর থাকা হবে না। ইশ! আমরা স্বামীরা কি পারিনা ওদের
বাবার বাড়িতে কয়েকটা দিন থাকার সুযোগ করে দিতে?
ওবাড়ির সেই চিরচেনা উঠোন, বাড়ির অলিগলি, কত চেনা তার! ঘরের
পাশের বাগানে কতো ফুল ফুটতো! এখনো ফোটে! তবুও ফুলেদের মাঝে পরী হয়ে দাঁড়ানো হয়
না তার। বাগানের গাছেরা এখনো তাদের পরীকে ডাকে- "আয় পরী, জল ঢেলে দে"! গোয়াল ঘরের নিকটে পুকুরপাড়ের সেই হিজল
গাছের নিচে বসে মেয়েটির কতদিন কতোবেলা কতোক্ষণ কেটেছে। পাশের বাড়ির সেই
বান্ধবীটার সাথে কতো কতো গল্প করে সময় কেটেছে। ছোটবেলায় কতো খেলেছে পুতুল খেলা।
বাড়ির অমুকের কথা, তমুকের কথা এখনও
তার মনে পড়ে খুব। বাড়ির ওঘরে-সেঘরে একটু ঘুরে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা তার মনে এখনও
যে আছে!
সব তার স্মৃতির পাতায় অমলিন। সব আছে এখনো, ও বাড়িতে নেই শুধু সে। তার অস্তিত্ব আজ অন্য বাড়িতে। এ
বাড়িতেও তো সব আছে, কিন্তু নেই স্মৃতির
পাতার সেই স্মৃতি গুলোর সাথে মিল। সেই মিল খুঁজতেই তো বারবার ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়
বাপের বাড়িতে। তবে আমরা পুরুষেরা কি পারিনা একটু কষ্ট করতে? জানি- প্রিয়তমা স্ত্রীকে ছেড়ে থাকা খুব কঠিন। তারপরও না
হয় কয়েকটা দিন কষ্ট করে থাকি। তাকে তার বাপের বাড়িতে বেড়ানোর সুযোগ করে দেই।
দেওয়াটা কিন্তু উচিত। তাতে বৌটা খুব খুশিই তো হবে!
তবে অনেক সময়ে চক্রান্তের অংশ হিসেবে স্ত্রীকে বাপের বাড়ি যেতে দেওয়া হয়
না। বলতে গেলে কেনা গোলামের মতো আচরণ করা হয়। কেমন যেনো একবার কিনে নিয়েছি তাই
সে হুকুম ছাড়া বাবার বাড়ি যাওয়ার অধিকারও রাখে না। মনে রাখতে হবে স্ত্রী দাসি
নয়। অনেক সময় বাপের বাড়ির উপর মেয়েটির টান যাতে না থাকে সে চেষ্টা করা হয়
স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে। স্ত্রী বেশি 'বাপের বাড়ি' 'বাপের বাড়ি' করলে স্বামীরা তা
ভালো চোখে দেখেন না। বাপের বাড়ি নিয়ে বেশি মাথা ঘামানো ও তাদের বেশি বেশি
খোঁজখবর রাখতে চেষ্টা করা পুরুষের চোখে অপছন্দনীয়। অধিকাংশ পুরুষ এমনই প্রকৃতির
হয়ে থাকে। তবে পুরুষদের এ ধরনের হীন মানসিকতা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হবে।
তাছাড়া বাচ্চাদের পরম আপন এক জায়গা হলো মামা বাড়ি। ছোটবেলায় মামা বাড়ির
উপর তীব্র টান থাকে। মামা বাড়ি যাবার জন্য সে কি অধীর আগ্রহ। মা মামা বাড়িতে
নিয়ে যাবেন, শুনলেই বাচ্চাদের
রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। মা কখন রওনা দিবেন, কখন নানা নানু মামা খালাদের কাছে তারা পৌঁছাবে! তাদেরও
ভাগ্নে ভাগ্নে নাতি নাতনীদের উপর অন্যরকম এক ভালোবাসার টান কাজ করে। আর সেই
ভালোবাসার মিলন কিভাবে হবে যদি বাচ্চাদের মাকে বাবার বাড়িতে যেতে না দেওয়া হয়? এর মাধ্যমে বাচ্চাদের হক নষ্ট করা হয়। শৈশব-কৈশোরে তাদের
ভালোলাগা - ভালোবাসা স্থান হলো মামা বাড়ি। সেই মামাবাড়িতে যেতে না পারলে তাদের
যেমন কষ্টের শেষ থাকে না, তেমনি
মায়েরও ইচ্ছা করে সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়িতে ঘুরতে-ফিরতে, কয়েকটি দিন থাকতে। অন্যদিকে নানা-নানুও তাদের নাতি
নাতনীদের বুকে নিয়ে আদর-আহ্লাদ মেটানোর জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকেন। সেই বন্ধন
ছিন্ন করার চেষ্টা করা অন্যায়। এতে নানা-নানির বুকে আঘাত লেগে যায়।
পাশাপাশি অনেক শাশুড়িও পুত্রবধূকে তার বাবার বাড়িতে যেতে দিতে চান না। একজন মুরুব্বী মানুষ কেন এমন হবেন? তার নিজের মেয়ের বেলায় যদি এমন ঘটে? আর ছেলে যদি তার স্ত্রীর বাবার বাড়ি যাওয়া আটকাতে চায় তাহলে শাশুড়ির উচিত ছেলেকে বোঝানো। পুত্রবধূকে বাপের বাড়িতে মাঝেমধ্যেই বেড়াতে যেতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। যেখানে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা, শিকড় যেখানে গ্রন্থিত, সেই বাবা ভাই মা বোনেদের কাছে তাকে যেতে দেওয়া যাবে না এ ধরনের চিন্তা ভাবনা ভুল। যদি এমন হয় যে শশুর বাড়ির সাথে পুরুষের যৌক্তিক কারণেই সম্পর্ক ভালো না থাকার কারণে স্ত্রীকে বাপের বাড়ি যেতে দেওয়া হয় না। কারণ তা হলেও স্ত্রীর বাপের বাড়ি যাওয়া আটকানো যাবেনা। বাপের বাড়ি যাওয়া আটকিয়ে বা ঘনঘন যেতে না দিয়ে ওবাড়ির উপর তার সহজাত নাড়ির টান ছিন্ন করা যায় না, চেষ্টা করাও অন্যায় ও পাপ।
তাছাড়া একটি মেয়েকে তার বাপের বাড়িতে যেতে না দেওয়ার পেছনে যৌক্তিক কিছু কারণও থাকে অনেক সময়। যেমন হতে পারে মেয়ের বাপের বাড়িতে আশেপাশে কোথাও তার প্রেমিক রয়েছে। এটা জানাজানি হওয়ার পর শ্বশুর বাড়ি থেকে তাকে ওখানে না যেতে বলা হয়। আবার হতে পারে মেয়ের মা বা অন্য কেউ মেয়েকে সবসময় প্ররোচনা দেয় স্বামীকে তালাক দেওয়ার জন্য। এও হতে পারে ও বাড়িতে তার উপযুক্ত কোন অভিভাবক অবশিষ্ট নেই যার কাছে সে নিরাপত্তার সাথে কয়েকদিন বেড়াতে পারবে। হতে পারে সেখানে থাকার জন্য পরিবেশের অভাব রয়েছে, হয়তো তার থাকতে কষ্ট হবে, বাচ্চাদের থাকা-খাওয়ার কষ্ট হবে ওখানে গেলে। পাশাপাশি দেখা যায় শ্বশুর বাড়ির লোকেরা জামাইয়ের সাথে এমন দুর্ব্যবহার করেছে, যার ফলে সত্যিই তাদের ওখানে স্ত্রীকে পাঠানোর মন মানসিকতা স্বামীর আর থাকেনা। এসব ক্ষেত্রে যেতে না দেওয়া ভুল হচ্ছে তা আমি বলবো না। এমন যৌক্তিক কারণ থাকার পরেও যদি সুযোগ থাকে অবশ্যই বউকে বাপের বাড়িতে যেতে দেওয়া উচিত। যেকোনো ভাবেই হোক আমি একটা মেয়ের বাবার বাড়ির সাথে তার সম্পর্ক ছিন্ন করার পক্ষে নই।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles