স্ক্রলিং এমন আসক্তিকর কেন? স্নায়ুর উপর এটা কী প্রভাব ফেলে?
স্ক্রলিং (scrolling) আসক্তিকর হওয়ার পেছনে
কিছু মৌলিক মানসিক এবং স্নায়বিক কারণ রয়েছে। ডিজিটাল ডিভাইস যেমন স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট ব্যবহার করার সময় অবিরত স্ক্রলিং করা, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া বা নিউজফিডে, মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে এবং তাদের স্মৃতি বা অনুভূতি
শিকার করতে সক্ষম হয়। এটা আসলে স্নায়ু ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে এবং মানুষের
স্নায়ু বা মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশকে প্রভাবিত করে।
স্ক্রলিং কেন আসক্তিকর?
- "নতুন তথ্যের খোঁজ"
এবং "ভেরিফিকেশন":
স্ক্রলিং যখন আপনি কোনও সোশ্যাল মিডিয়া বা নিউজ ফিডে করছেন, তখন আপনি একটি "নতুন" আপডেট বা তথ্য খোঁজার জন্য মনোযোগী থাকেন। এই নতুনত্বের প্রতি আমাদের মস্তিষ্কের একটা বিশেষ ধরনের আগ্রহ থাকে, যার নাম ডোপামিন। যখন আপনি নতুন কিছু দেখতে পান, যেমন একটি মজার ছবি বা আকর্ষণীয় পোস্ট, তখন এটি আপনাকে সন্তুষ্টি দেয়, এবং সেই সন্তুষ্টির জন্য আপনি আরও স্ক্রল করতে থাকেন।
এটি অবিরত তথ্য খোঁজার প্রবণতা তৈরি করে, কারণ প্রতিটি নতুন তথ্য বা আপডেট মস্তিষ্কে একটি ক্ষুদ্র আনন্দের অনুভূতি (ডোপামিন রিলিজ) সৃষ্টি করে। - ফার্স্ট রেসপন্স
(Instant Gratification):
স্ক্রলিং থেকে পাওয়া সন্তুষ্টি হচ্ছে "তৎক্ষণাৎ পুরস্কার" বা ইন্সট্যান্ট গ্র্যাটিফিকেশন। আপনি যখন স্ক্রলিং করতে থাকেন, তখন আপনি একের পর এক নতুন কিছু পেতে থাকেন। প্রতিটি স্ক্রোলের সঙ্গে নতুন কিছু দেখা, যেমন একটি মজার ভিডিও বা তথ্য, দ্রুত উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এটি একটা চক্র সৃষ্টি করে যা আপনাকে বারবার স্ক্রল করতে বাধ্য করে, যাতে এই তাত্ক্ষণিক আনন্দ লাভ করতে থাকেন। - সোশ্যাল প্রুফ:
সোশ্যাল মিডিয়ার স্ক্রলিংয়ে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার পাবার মাধ্যমে আপনি আরো সাড়া পান। এটি সোশ্যাল প্রুফ বা সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়ার একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার সত্তা বা চিত্র আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই পুরস্কৃত অনুভূতি একে আসক্তিকর করে তোলে, এবং ব্যবহারকারী মনে করতে থাকে, "আরেকটি পোস্ট বা স্ক্রোল করার মাধ্যমে হয়তো আরও নতুন সাড়া পাবো!"
স্নায়ুর উপর স্ক্রলিংয়ের প্রভাব:
- ডোপামিন
সিস্টেমে প্রভাব:
স্ক্রলিং সাধারণত মস্তিষ্কের ডোপামিন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে, যা আনন্দ, পুরস্কার এবং মনোভাবের অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত। প্রতিবার আপনি নতুন কিছু দেখতে পান বা উত্তেজক কিছু অনুভব করেন, ডোপামিন রিলিজ হয়, যা আপনাকে আরেকটি স্ক্রোল করতে উৎসাহিত করে। এই পুনরাবৃত্তি স্নায়ুতন্ত্রে একটি আসক্তি সৃষ্টি করতে পারে, যা অন্য যে কোনও আসক্তির মতো কার্যকর হতে পারে। - প্লাস্টিসিটি (Neuroplasticity):
স্ক্রলিং এবং ডিজিটাল কনটেন্টের অবিরত প্রবাহ, বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য ফিড অ্যাপ্লিকেশনগুলো, আমাদের মস্তিষ্কে নিউরোপ্লাস্টিসিটি নামে একটি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। এর মানে হলো, নিয়মিত স্ক্রলিং বা এই ধরনের প্রচলিত আচরণের কারণে আমাদের মস্তিষ্কের সংযোগগুলি পুনর্গঠিত হতে পারে। দীর্ঘকাল ধরে এই আচরণ চালিয়ে গেলে, এটি আরো সহজ হয়ে যায় এবং আসক্তির চেহারা নিতে পারে। - মনোযোগের ক্ষতি
(Attention Fatigue):
স্নায়ু ব্যবস্থা যখন অবিরতভাবে একের পর এক তথ্য প্রক্রিয়া করতে থাকে, তখন মস্তিষ্কের মনোযোগ শক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে। এটি আটেনশন ফ্যাটিগ বা মনোযোগের ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে একজন ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এছাড়া, মস্তিষ্কে একাধিক জিনিস একসাথে প্রক্রিয়া করার চাপ বাড়ে, যা দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রলিং করলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের কারণ হতে পারে। - মেলাটোনিনের
প্রভাব:
রাতে স্ক্রলিং করার ফলে মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ প্রভাবিত হতে পারে। মেলাটোনিন আমাদের ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন এবং এটি স্ক্রিনের নীল আলো (blue light) থেকে প্রভাবিত হয়ে হ্রাস পেতে পারে। রাতে স্ক্রলিং করার ফলে ঘুমের সমস্যা তৈরি হতে পারে এবং এটি আমাদের স্নায়ু বা মস্তিষ্কের পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
উপসংহার:
স্ক্রলিং আসক্তিকর হওয়ার পেছনে স্নায়ুবিজ্ঞানীয় কারণ রয়েছে, যেখানে ডোপামিন রিলিজ,
তাত্ক্ষণিক
পুরস্কার এবং সামাজিক সাড়া আমাদের মস্তিষ্ককে বারবার স্ক্রল করতে প্ররোচিত করে।
এটি একটি শক্তিশালী মনস্তাত্ত্বিক চক্র তৈরি করে, যা আসক্তি সৃষ্টি করতে পারে। স্ক্রলিং অতিরিক্ত হলে, এটি মনোযোগের ক্ষতি,
মানসিক
চাপ এবং ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই স্ক্রলিংয়ের সময় সচেতন থাকা এবং এটি
নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি
মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার
মোবাইল আসক্তি রোগ
মোবাইল আসক্তির কুফল
মোবাইল আসক্তি নিয়ে উক্তি
মোবাইল আসক্তি অনুচ্ছেদ
মোবাইল আসক্তি মেধা বিকাশের অন্তরায়
মোবাইল আসক্তির প্রতিরোধ
সালোকসংশ্লেষে আলোর প্রয়োজন কারণ
মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার
সালোকসংশ্লেষ কখন ঘটে
শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি
মোবাইল আসক্তি রচনা
মোবাইল আসক্তি কি
সালোকসংশ্লেষে কোন গ্যাস ব্যবহৃত হয়
সালোকসংশ্লেষণ ঘটে
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles