কাউন্টার ট্রেড কি এবং এর শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্কে আলোচনা
কাউন্টার ট্রেড (Countertrade) কি?
কাউন্টার ট্রেড এমন একটি বাণিজ্যিক চুক্তি যা
একটি দেশ বা প্রতিষ্ঠান অন্য দেশের সাথে পণ্য বা সেবা কেনা-বেচার ক্ষেত্রে আর্থিক
লেনদেনের পরিবর্তে পণ্য বা সেবার মাধ্যমে পেমেন্ট করতে সহমত হয়। সহজ ভাষায়, এটি একটি
"বদলানো বাণিজ্য" যেখানে অর্থের পরিবর্তে পণ্য বা সেবা বিনিময় করা হয়।
অর্থাৎ, কাউন্টার ট্রেড এমন একটি বাণিজ্যিক চুক্তি যেখানে এক
পক্ষ আর্থিক মুদ্রার পরিবর্তে অন্য পণ্য বা সেবা প্রদান করে।
বিশ্বব্যাপী কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বা
দেশগুলির মধ্যে যেখানে সরাসরি অর্থনৈতিক লেনদেন সম্ভব হয় না, সেখানে
কাউন্টার ট্রেড ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের বাণিজ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি বিকল্প
ব্যবস্থারূপে কাজ করে, বিশেষত যেখানে মুদ্রা বিনিময় কঠিন বা
নিষিদ্ধ।
কাউন্টার ট্রেডের
শ্রেণীবিন্যাস:
কাউন্টার ট্রেড বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক চুক্তির উপর নির্ভর করে। প্রধানত, কাউন্টার
ট্রেডের নিচে কয়েকটি শ্রেণী বা ধরন রয়েছে, যেমন:
১. বার্টার ট্রেড (Barter Trade):
বার্টার ট্রেড হল সবচেয়ে পুরানো এবং সরলতম ধরনের
কাউন্টার ট্রেড,
যেখানে দুটি পক্ষ সরাসরি পণ্য বা সেবা বিনিময় করে, অর্থের কোনো লেনদেন ছাড়াই। এতে, একটি পক্ষ তার পণ্য
সরবরাহ করে এবং অপর পক্ষ তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করে।
- উদাহরণ: একটি দেশ যদি পেট্রোলিয়াম পণ্য
বিক্রি করে, তবে অপর দেশ সেই দেশের তৈরি কিছু কৃষিপণ্য
বা শিল্পজাত পণ্য প্রদান করবে।
২. ক্লোজড-বক্স কাউন্টার
ট্রেড (Closed-Box
Countertrade):
এতে একজন ক্রেতা বা বিক্রেতা এক পক্ষের সাথে
লেনদেনের সময় অন্য পক্ষের প্রস্তাবিত পণ্য গ্রহণ করে এবং তাদের নিজস্ব পণ্য অন্য
পক্ষকে সরবরাহ করে। এই ধরনের লেনদেন সম্পূর্ণভাবে একে অপরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে
এবং এতে কোনো তৃতীয় পক্ষের অংশগ্রহণ থাকে না।
- উদাহরণ: একটি দেশ যদি একটি উন্নত দেশ থেকে
প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি কিনে এবং সেগুলোর জন্য তাদের নিজস্ব পণ্য বা কৃষিপণ্য
সরবরাহ করে, তবে এটি ক্লোজড-বক্স কাউন্টার ট্রেড হতে
পারে।
৩. টেকনোলজি ট্রান্সফার
কাউন্টার ট্রেড (Technology Transfer Countertrade):
এই ধরনের কাউন্টার ট্রেডে একটি দেশ বা প্রতিষ্ঠান
প্রযুক্তি বা প্রযুক্তিগত সেবা সরবরাহ করে এবং এর পরিবর্তে অন্য দেশ তাদের পণ্য বা
সেবা প্রদান করে। এটি সাধারণত উন্নত দেশগুলো থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি
স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- উদাহরণ: একটি উন্নত দেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে
প্রযুক্তি সরবরাহ করে এবং তার পরিবর্তে দেশটি তাদের কৃষিপণ্য বা অন্যান্য
প্রাকৃতিক সম্পদ পাঠায়।
৪. ডেলাইড-পেমেন্ট কাউন্টার
ট্রেড (Delayed
Payment Countertrade):
এই ধরনের কাউন্টার ট্রেডে একজন পক্ষ সরাসরি পণ্য
বা সেবা প্রদান করে এবং অন্য পক্ষ ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেগুলোর জন্য
পণ্য বা সেবা প্রদান করবে। এই লেনদেনের মধ্যে সাধারণত একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা
হয়।
- উদাহরণ: একটি দেশ এক বছরের জন্য কোনও পণ্য বা
সেবা সরবরাহ করতে পারে এবং তার বদলে অপর পক্ষ এক বছর পর তাদের পণ্য সরবরাহ
করবে।
৫. রেভার্স কাউন্টার ট্রেড (Reverse Countertrade):
এই ধরনের ট্রেডে, এক পক্ষ কোনো পণ্য বা সেবা
সরবরাহ করে এবং এর পরিবর্তে অন্য পক্ষ তাদের পণ্য সরবরাহ করে। তবে, রেভার্স কাউন্টার ট্রেডে পক্ষগুলির মধ্যে লেনদেন সাধারণত একাধিক পর্যায়ে
এবং একাধিক পণ্য বা সেবা হতে পারে।
- উদাহরণ: একটি দেশ অস্ত্র রপ্তানি করতে পারে,
এবং এর পরিবর্তে অপর দেশ তার কৃষি পণ্য বা শিল্প পণ্য প্রদান
করবে।
৬. সিমুলটেনিয়াস কাউন্টার
ট্রেড (Simultaneous
Countertrade):
এখানে এক পক্ষ পণ্য সরবরাহ করে এবং অপর পক্ষ একই
সময়েই তার পণ্য বা সেবা সরবরাহ করে। অর্থাৎ, এই ধরনের লেনদেন একে অপরের সমান্তরালে
সম্পন্ন হয়।
- উদাহরণ: একটি দেশ যদি কোনো উন্নত দেশকে পণ্য
সরবরাহ করে, তবে সেই একই সময়ে ওই উন্নত দেশ তাদের
শিল্পজাত পণ্য বা প্রযুক্তি প্রদান করবে।
৭. মুলটিপল কাউন্টার ট্রেড (Multiple Countertrade):
এ ধরনের কাউন্টার ট্রেডে একাধিক পক্ষের মধ্যে
পণ্য বা সেবা বিনিময় হয়। এক্ষেত্রে, এক পক্ষ একাধিক পণ্য সরবরাহ করে এবং অপর
পক্ষও তার পণ্য বা সেবা একাধিকভাবে সরবরাহ করে।
- উদাহরণ: একটি দেশ একাধিক পক্ষের সাথে পণ্য ও
সেবা বিনিময় করে, যেমন একটি দেশ কৃষিপণ্য সরবরাহ করবে
এবং অন্য দেশগুলো তাদের প্রযুক্তি বা শিল্পজাত পণ্য সরবরাহ করবে।
কাউন্টার ট্রেডের সুবিধা:
- অর্থনৈতিক সংকট কাটানো: যখন
কোনো দেশ তার মুদ্রার মান সংকুচিত বা দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন
কাউন্টার ট্রেড তার জন্য কার্যকর হতে পারে, কারণ এটি
আর্থিক লেনদেনের পরিবর্তে সরাসরি পণ্য বা সেবা বিনিময়ের সুযোগ দেয়।
- বিশ্ববাজারে প্রবেশ সহজ করে: দেশগুলো
যখন নতুন বাজারে প্রবেশ করতে চায়, তখন তারা কাউন্টার
ট্রেডের মাধ্যমে সহজে বিনিময় করতে পারে।
- বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন: বিশেষ
করে উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য, এটি উন্নত দেশগুলির সাথে
বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের একটি সহজ উপায় হতে পারে, যেখানে
মুদ্রা বা অর্থের পরিবর্তে পণ্য বিনিময় হয়।
- লভ্যাংশ বৃদ্ধি: কিছু দেশ তাদের পণ্য বা
সেবা বিনিময় করে অনেক বেশি লাভবান হতে পারে, কারণ তারা
আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পণ্য বা সেবা সরবরাহ করতে সক্ষম হয়।
কাউন্টার ট্রেডের অসুবিধা:
- বাজারে পণ্যের দাম নির্ধারণ কঠিন: কাউন্টার
ট্রেডে পণ্য ও সেবা সরবরাহ করা হয়, তবে তাদের মূল্য
নির্ধারণ করতে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যদি একটি
পণ্য বা সেবা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য না হয়।
- ব্যবসার জটিলতা: একাধিক পণ্য বা সেবা
বিনিময় করতে গেলে, ব্যবসার জন্য বিভিন্ন শর্ত ও কৌশল
জটিল হয়ে উঠতে পারে।
- অতিরিক্ত সময় ব্যয়: কাউন্টার ট্রেডে লেনদেনের
সময়কাল দীর্ঘ হতে পারে, কারণ এক পক্ষের পণ্য বা সেবা
সরবরাহের পর অপর পক্ষের পণ্য পাওয়া যায়।
উপসংহার:
কাউন্টার ট্রেড একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক
বাণিজ্যিক চুক্তি যা অর্থের পরিবর্তে পণ্য বা সেবা বিনিময় করা হয়। এটি বিশেষভাবে
সেই দেশগুলির জন্য কার্যকর, যাদের মুদ্রা দুর্বল, অথবা যারা
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে চায়। তবে, এর কিছু অসুবিধাও
রয়েছে, যেমন মূল্য নির্ধারণের সমস্যা এবং বাণিজ্যিক জটিলতা।
Countertrade example
Types of countertrade
Countertrade meaning
Buyback countertrade
Offset countertrade
Countertrade example companies
Countertrade forex
What are the 5 types of counter trade
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles