ইসলাম ও টেকনোলজি: একটি সঙ্গতি ও উন্নতি
টেকনোলজি বা প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ আধুনিক যুগের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। এটি
মানুষের জীবনকে সহজ, গতিশীল এবং আরও কার্যকর করেছে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক
ক্ষেত্রে, ধর্ম এবং আধুনিকতার মধ্যে এক ধরনের সংঘাতের ধারণা
প্রচলিত আছে। তবে, ইসলাম ও প্রযুক্তি একে অপরের পরিপূরক হতে
পারে এবং এটি একদিকে যেমন ইসলামের মৌলিক নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, তেমনই মানুষের কল্যাণে উন্নতির জন্য কার্যকরী উপায় হিসেবে প্রমাণিত হতে
পারে।
এই প্রবন্ধে আমরা ইসলাম এবং প্রযুক্তির সম্পর্ক, এর মধ্যে সঙ্গতি এবং মুসলিম
সমাজে প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
১. ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
ইসলাম ধর্মের প্রাথমিক দিক থেকেই জ্ঞান ও শিক্ষা অর্জনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কুরআনে সর্বপ্রথম যে আয়াত নাজিল হয় তা ছিল, "পড়ো"
(ইকরাহ)। ইসলামের এই শিক্ষা মানুষের চিন্তা ও জ্ঞানের সন্ধানে উৎসাহিত করেছে।
কুরআন এবং হাদিসের বহু জায়গায় জ্ঞান অর্জন, চিন্তা-ভাবনা এবং
বিজ্ঞানে প্রবেশের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই যে,
ইসলাম শিক্ষা ও প্রযুক্তির বিকাশে উৎসাহ দেয়।
ইসলামের জ্ঞানতত্ত্বের মধ্যে আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা একটি
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। তাই প্রযুক্তি, যা মানব জীবনের কল্যাণে নতুন
নতুন উপায় উদ্ভাবন করে, তা ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে বিচ্যুত
নয়, বরং ইসলামের দিক নির্দেশনায় তা মানবকল্যাণের দিকে
পরিচালিত হতে পারে।
২. প্রযুক্তি ও ইসলামের মধ্যে সঙ্গতি
প্রযুক্তি এবং ইসলাম কখনোই পরস্পরের বিপরীত নয়। ইসলাম বিজ্ঞানের প্রতি
শ্রদ্ধাশীল এবং যুগের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করা ইসলামের শিক্ষা
অনুসারে উপকারী হতে পারে। ইসলামে প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং ব্যবহারকে অনুমোদন করা
হয়েছে যদি তা মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয় এবং এর মাধ্যমে ধর্মীয় নীতিগুলি লঙ্ঘিত
না হয়।
২.১ প্রযুক্তির ব্যবহার মানবকল্যাণে
ইসলামি আদর্শে প্রযুক্তি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হল মানবতার সেবা। কুরআন এবং
হাদিসের নীতির মধ্যে যেমন সমাজের কল্যাণের জন্য কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে, তেমনি
প্রযুক্তির বিকাশও এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে হতে হবে। চিকিৎসা, কৃষি, পরিবহন, শিক্ষা এবং
যোগাযোগ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে মানুষ যেমন উপকৃত হয়েছে, তেমনি সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করাও
গুরুত্বপূর্ণ।
উদাহরণস্বরূপ, মেডিকেল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অসুস্থতা নিরাময় এবং
মানুষের জীবন রক্ষার কাজটি ইসলামের মূল্যবোধের সঙ্গে একত্রিত। চিকিৎসাবিজ্ঞান,
বিশেষ করে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান, যেমন
আল-রাযি, ইবনে সিনা, আল-আজহার
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা, প্রযুক্তি ও ইসলামকে একে অপরের
পরিপূরক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
২.২ ইসলামে নৈতিক দিক
প্রযুক্তির ব্যবহার যদি নৈতিকভাবে সঠিক না হয়, তা তখন ইসলামি মূল্যবোধের
বিরুদ্ধে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যে প্রযুক্তি মানবাধিকার,
ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি ক্ষতিকর হতে
পারে, তা ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামে হারাম বা নিষিদ্ধ
কর্মকাণ্ডের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি, যেমন
মদ্যপান, পর্নোগ্রাফি, জুয়া ইত্যাদি।
এর মানে, প্রযুক্তি যদি অন্যায় বা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে
ব্যবহার করা হয়, তবে ইসলাম সেই ব্যবহারের বিরোধিতা করবে।
৩. ইসলামে গবেষণা ও উদ্ভাবন
ইসলামের ইতিহাসে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে
উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করা হয়েছে। মুসলিম সভ্যতা রূপান্তরিত করেছে আধুনিক
বিজ্ঞানের ধারণাগুলিকে, বিশেষ করে গণিত, চিকিৎসাবিজ্ঞান, রসায়ন, স্থাপত্যশিল্প
এবং অন্যান্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। আল-খোয়ারিজমি, আল-রাযি,
ইবনে সিনা, আল-তুসি, আল-বাতানী—এমন
বহু মুসলিম বিজ্ঞানী আধুনিক প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
এখনও যদি মুসলিম সমাজ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নতি করতে চায়, তবে একে
গবেষণার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। ইসলাম একে প্রেরণা দেয় এবং নবীন প্রযুক্তি
উদ্ভাবনে আল্লাহর রহমত হিসেবে দেখে। ইসলামের জ্ঞানচর্চার তাগিদ বর্তমানে বিজ্ঞান,
প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলতে সাহায্য করতে
পারে।
৪. বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তি
বর্তমানে, বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তি সব জায়গায় প্রবাহিত হচ্ছে। আধুনিক
তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), ইন্টারনেট, সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগের মাত্রা এবং সমগ্র বিশ্বের সাথে
সম্পর্ককে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরেছে। তবে, এসব প্রযুক্তি
ব্যবহারে কুরআনের নির্দেশনা ও ইসলামের নৈতিক শিক্ষা অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
এখানে, ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সঠিক তথ্য পরিবেশন এবং গুজব ও অপপ্রচার
প্রতিরোধের ওপর জোর দেয়। এছাড়াও, ইসলামে শিক্ষা এবং দক্ষতার
উন্নতির জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হয়, যা
সমাজের উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. আধুনিক মুসলিম সমাজে প্রযুক্তির ভূমিকা
মুসলিম সমাজে প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা এবং এর উপকারিতা এখনও কিছুটা সীমাবদ্ধ।
তবে, এই সীমাবদ্ধতাগুলি হটানোর জন্য মুসলিম দেশগুলিকে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে
অবদান রাখতে ও নতুন প্রযুক্তির বিকাশে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। আধুনিক
প্রযুক্তি সমাজের বিভিন্ন দিক যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য,
পরিবহন, অর্থনীতি এবং প্রশাসনেও প্রভাব ফেলছে।
তাদের উচিত স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন প্রযুক্তির গবেষণা, উদ্ভাবন এবং
উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা। এছাড়াও, এটি মুসলিম দেশগুলির মধ্যে
বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়িক উন্নয়নও সৃষ্টি করতে পারে।
উপসংহার
ইসলাম এবং প্রযুক্তির মধ্যে কখনও কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। ইসলাম, প্রকৃতপক্ষে,
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশে সহায়ক এবং উৎসাহ প্রদানকারী ধর্ম।
ইসলামের মূল শিক্ষা হল মানুষের কল্যাণে কাজ করা এবং বিশ্বের সর্বোত্তম ব্যবস্থার
জন্য উদ্ভাবন করা। আজকের আধুনিক সমাজে প্রযুক্তির ব্যবহার আল্লাহর রহমতের মাধ্যমে
মানবজাতির সেবা করার একটি মাধ্যম হতে পারে, যদি তা নৈতিকভাবে
এবং ইসলামী মূল্যবোধ অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়। মুসলিম সমাজের উচিত প্রযুক্তি
ব্যবহারে ইসলামী আদর্শের সাথে সঙ্গতি রেখে এগিয়ে যাওয়া এবং এর মাধ্যমে সামাজিক ও
অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করা।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে ইসলামের নীতিমালা
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ভর্তি তথ্য
আল হাদিস শিক্ষা শিক্ষা উপকরণ হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
ইসলাম প্রচারে প্রযুক্তির ব্যবহার
ও আই সি এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট কে
ইসলামী দাওয়াতের পদ্ধতি ও আধুনিক প্রেক্ষাপট pdf
IUT subject List
বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কয়টি
পদার্থ বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলমানদের অবদান
বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান pdf
বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান বই
চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান
জ্ঞান বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান রচনা
আধুনিক বিজ্ঞানে ইসলামের অবদান
মুসলিম বিজ্ঞানী ও তাদের আবিষ্কার
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles