ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমের উপর পরোক্ষ প্রভাব বিস্তারকারী পরিবেশের
উপাদানগুলো কি? বিস্তারিত আলোচনা
করুন।
পরিবেশের উপাদানগুলোকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়— পরোক্ষ (Macro Environment) এবং প্রত্যক্ষ (Micro Environment) উপাদান। পরোক্ষ পরিবেশগত উপাদান সরাসরি ব্যবসার দৈনন্দিন
কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ না করলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি ব্যবস্থাপনার উপর গভীর প্রভাব
ফেলে।
পরোক্ষ প্রভাব বিস্তারকারী পরিবেশের উপাদানগুলো:
১. অর্থনৈতিক পরিবেশ: ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমের উপর অর্থনৈতিক পরিবেশের
গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। এটি মূলত অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থা, বাজার চাহিদা, মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার, বেকারত্বের হার, বৈদেশিক
মুদ্রার হার ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যবসার উপর প্রভাব ফেলে।
- উদাহরণস্বরূপ, অর্থনৈতিক মন্দার সময় গ্রাহকরা কম ব্যয় করে, ফলে ব্যবসার আয় কমে যায় এবং ব্যয় হ্রাসের কৌশল গ্রহণ করতে হয়।
- বিপরীতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সময় ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ
সৃষ্টি হয়।
২. রাজনৈতিক ও আইনগত পরিবেশ: সরকারের নীতি ও আইন ব্যবস্থাপনার
কার্যক্রমকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। বিভিন্ন ব্যবসা-বান্ধব বা ব্যবসা-বিরোধী
নীতি ব্যবস্থাপকদের কৌশল পরিবর্তনে বাধ্য করে।
- করনীতি, শ্রম আইন, ভোক্তা অধিকার আইন,
প্রতিযোগিতা আইন ইত্যাদি ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- উদাহরণস্বরূপ, নতুন শ্রম আইন অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো হলে
ব্যবসাকে অতিরিক্ত ব্যয় সামলাতে হয়।
৩. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ: সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের
পরিবর্তন ব্যবসার চাহিদা ও ব্যবস্থাপনার কৌশলকে প্রভাবিত করে।
- ভোক্তাদের জীবনধারা, ধর্মীয় বিশ্বাস, রীতিনীতি, শিক্ষা ও জনসংখ্যার গঠন ব্যবস্থাপনা কৌশল নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
- উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে ফাস্ট ফুড কোম্পানিগুলো
স্বাস্থ্যকর পণ্য বাজারজাত করতে বাধ্য হয়েছে।
৪. প্রযুক্তিগত পরিবেশ: নতুন প্রযুক্তির উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার
কার্যক্রমকে বদলে দেয় এবং প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি করে।
- অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), রোবটিক্স,
ই-কমার্স ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিকে নতুনভাবে গঠন করেছে।
- উদাহরণস্বরূপ, অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেম ব্যাংক
ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।
৫. প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত উপাদান: পরিবেশগত পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ,
এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমকে পরোক্ষভাবে
প্রভাবিত করে।
- গ্রীন বিজনেস কৌশল, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, বর্জ্য
ব্যবস্থাপনা ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে।
- উদাহরণস্বরূপ, প্লাস্টিক বর্জ্য কমানোর জন্য অনেক কোম্পানি কাগজ বা
বায়োডিগ্রেডেবল উপকরণ ব্যবহার করছে।
৬. আন্তর্জাতিক পরিবেশ: গ্লোবালাইজেশনের ফলে ব্যবস্থাপনা এখন
আন্তর্জাতিক পরিবেশের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।
- আমদানি-রপ্তানি নীতি, আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য বাধা, আন্তর্জাতিক
মুদ্রার বিনিময় হার ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- উদাহরণস্বরূপ, চীনে উৎপাদন ব্যয় কম হওয়ায় অনেক কোম্পানি উৎপাদন
কার্যক্রম সেখানে স্থানান্তর করেছে।
উপসংহার: পরোক্ষ পরিবেশ ব্যবস্থাপনার উপর দীর্ঘমেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ
প্রভাব ফেলে। সফল ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবস্থাপকদের অবশ্যই অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রযুক্তিগত, পরিবেশগত ও আন্তর্জাতিক উপাদানসমূহ
সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার কৌশল গ্রহণ করতে
হবে।
বিকল্প উত্তর:
ব্যবস্থাপনার
কার্যক্রমের উপর পরোক্ষ প্রভাব বিস্তারকারী পরিবেশের উপাদানগুলো: বিস্তারিত আলোচনা
ভূমিকা: প্রতিটি প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে পরিচালিত হয়, যেখানে তার চারপাশে থাকা বিভিন্ন বাহ্যিক উপাদান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। এই বাহ্যিক উপাদানগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়—প্রত্যক্ষ (direct) এবং পরোক্ষ (indirect) উপাদান। পরোক্ষ উপাদানগুলো সরাসরি ব্যবস্থাপনার নীতিমালা বা সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ না করলেও দীর্ঘমেয়াদে তা কার্যক্রম, কৌশল ও ভবিষ্যত পরিকল্পনায় গভীর প্রভাব ফেলে।
পরোক্ষ প্রভাব
বিস্তারকারী উপাদানগুলো: বিশদ আলোচনা
১. অর্থনৈতিক উপাদান
(Economic Factors): দেশের আর্থিক অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার, বৈদেশিক বাণিজ্য পরিস্থিতি, বিনিয়োগ পরিবেশ ইত্যাদি একটি প্রতিষ্ঠানের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
ব্যবস্থাপনায় প্রভাব: যদি মুদ্রাস্ফীতি বাড়ে, তাহলে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাবে এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে, যা পরোক্ষভাবে লাভ-ক্ষতিতে প্রভাব ফেলবে।
২. রাজনৈতিক ও আইনগত
উপাদান (Political and Legal
Factors): সরকারের স্থিতিশীলতা, নতুন আইন, করনীতি, শিল্পনীতি, ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ ইত্যাদি ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যবস্থাপনায় প্রভাব: রাজনৈতিক অস্থিরতা বা নতুন শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠানকে
নতুনভাবে কৌশল নির্ধারণে বাধ্য করে, যদিও তা সরাসরি
সিদ্ধান্তের অংশ না হতে পারে।
৩. প্রযুক্তিগত
উপাদান (Technological
Factors): নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, অটোমেশন, ডিজিটালাইজেশন,
গবেষণা
ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি ও গতি পরিবর্তন করে।
ব্যবস্থাপনায় প্রভাব: প্রতিষ্ঠান যদি প্রযুক্তির সঙ্গে তাল না মেলে, তবে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। তাই প্রযুক্তির পরিবর্তন
ব্যবস্থাপনাকে রূপান্তরে প্রভাবিত করে।
৪. সামাজিক ও
সাংস্কৃতিক উপাদান (Socio-cultural
Factors): জনগণের জীবনধারা, মূল্যবোধ, শিক্ষার হার, ধর্ম, ভাষা, অভ্যাস ইত্যাদি
সমাজভিত্তিক উপাদান হিসেবে পরিগণিত হয়।
ব্যবস্থাপনায়
প্রভাব: ভোক্তাদের পছন্দ ও
অভ্যাস পরিবর্তন হলে ব্যবস্থাপনাকে বিপণন কৌশল ও উৎপাদন নীতিতে পরিবর্তন আনতে হয়।
৫. প্রাকৃতিক ও
ভূগোলভিত্তিক উপাদান (Natural
and Geographical Factors): জলবায়ু পরিবর্তন,
প্রাকৃতিক
দুর্যোগ, মৌসুমি বৈচিত্র্য, পরিবেশবান্ধব নীতি ইত্যাদি ব্যবস্থাপনার জন্য বিবেচ্য।
ব্যবস্থাপনায় প্রভাব: প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়তে পারে, যা পরোক্ষভাবে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করে।
৬. আন্তর্জাতিক
পরিবেশ (Global Environment): বিশ্ব অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক চুক্তি,
বহুজাতিক
কোম্পানির প্রবেশ, বৈদেশিক মুদ্রার
হারের পরিবর্তন, বৈশ্বিক সংকট (যেমন
মহামারী বা যুদ্ধ) ইত্যাদি।
ব্যবস্থাপনায় প্রভাব: বিদেশি পণ্যের দাম বেড়ে গেলে কাঁচামালের আমদানি
ব্যয় বাড়ে, যা ব্যবস্থাপনায় নতুন
ব্যয়নির্ধারণের প্রয়োজন সৃষ্টি করে।
৭. জনসংখ্যাগত উপাদান
(Demographic Factors): জনসংখ্যার গঠন, বয়স ভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস, নারী-পুরুষের অনুপাত, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ইত্যাদি ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যবস্থাপনায়
প্রভাব: কর্মী নিয়োগ, পণ্যের লক্ষ্য বাজার নির্ধারণে এই উপাদানগুলো পরোক্ষভাবে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উপসংহার: পরোক্ষ পরিবেশগত উপাদানগুলো ব্যবস্থাপনার নীতি ও
কার্যক্রমে ধীরে অথচ গভীর প্রভাব ফেলে। একটি সচেতন ও দক্ষ ব্যবস্থাপক অবশ্যই এই
উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করে আগাম কৌশল নির্ধারণ করেন। কারণ, যেসব প্রতিষ্ঠান পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে
পারে, তারাই ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতায়
এগিয়ে থাকতে পারে। সুতরাং, ব্যবস্থাপনায় সফলতা
অর্জনের জন্য পরোক্ষ উপাদানগুলোর প্রতি সদা সচেতন থাকা এবং প্রাসঙ্গিক কৌশল গ্রহণ
করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সার্চ কী: ব্যবস্থাপনার পরিবেশগত উপাদান কি কি?, পরিবেশ ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য কী?, আন্তর্জাতিক পরিবেশ কী?, কিভাবে ব্যবসা পরিবেশের উপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে?, ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশের উপাদান, উন্নয়ন ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক লেখ, ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের উপাদানসমূহ আলোচনা কর, ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান সমূহ, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বলতে কী বোঝো পরিবেশ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য
গুলি লেখ, পরিবেশ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব, পরিবেশ কিভাবে সংগঠনকে প্রভাবিত করে, ব্যবসায়ের বাহ্যিক পরিবেশ কি, ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী কি কি?, ব্যবস্থাপনার চারটি কার্যক্রম কি কি?, ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম কি কি?, ব্যবস্থাপনার তিনটি কার্যক্রম কি কি?, ব্যবস্থাপনার ধাপ কয়টি, ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী কয়টি, ব্যবস্থাপনার চক্র, ব্যবস্থাপনার নীতিমালা, কার্য ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী আলোচনা কর,
ব্যবস্থাপনার
গুরুত্ব আলোচনা কর, ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য, ব্যবস্থাপনার প্রথম ও শেষ কাজ কি
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles