লিখিত যোগাযোগের শব্দ নির্বাচনের উপায় কী কী? আলোচনা করুন।
লিখিত যোগাযোগে শব্দ নির্বাচন অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বার্তার স্পষ্টতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং
কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। সঠিক শব্দ নির্বাচন শ্রোতা বা পাঠকের কাছে বার্তা
সুস্পষ্ট ও অর্থপূর্ণ করে তোলে।
এখানে শব্দ নির্বাচনের কিছু কার্যকর উপায় আলোচনা
করা হলো:
১. সরল ও স্পষ্ট ভাষা ব্যবহার: লিখিত যোগাযোগে শব্দের সরলতা
এবং স্পষ্টতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কঠিন বা জটিল শব্দের ব্যবহার পাঠককে বিভ্রান্ত
করতে পারে। সরল,
সহজ ও সাধারণ ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে বার্তাটি সহজে বুঝতে পারা যায়।
উদাহরণ: “সমস্যা সমাধান করা” এর পরিবর্তে “সমস্যা
কাটানো” ব্যবহার করা বেশি প্রাসঙ্গিক হতে পারে।
২. টেকনিক্যাল বা বিশেষজ্ঞ
শব্দের ব্যবহার সীমিত করা: বিশেষজ্ঞ বা টেকনিক্যাল শব্দ শুধু তখন ব্যবহার করা উচিত যখন
পাঠক বা শ্রোতার বিষয় সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকে। অন্যথায়, টেকনিক্যাল
শব্দগুলি ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণ: চিকিৎসা সংক্রান্ত লেখায়
সাধারণ জনগণের জন্য সহজ ভাষা ব্যবহার করা প্রয়োজন, যেমন
"রক্তচাপ" এর পরিবর্তে "ব্লাড প্রেসার" বলা।
৩. শ্রোতার স্তর অনুযায়ী ভাষা
নির্বাচন: শ্রোতার বয়স, শিক্ষা, এবং অভিজ্ঞতার স্তর অনুযায়ী
ভাষা নির্বাচন করা উচিত। শিশুদের জন্য লেখা বার্তা সহজ, সরল
এবং সরাসরি হওয়া উচিত, কিন্তু পেশাদারদের জন্য ভাষা একটু
গম্ভীর ও জটিল হতে পারে। উদাহরণ: শিশুদের জন্য গল্পের বইয়ে শব্দগুলো হবে
সোজা ও সহজ, কিন্তু শিক্ষিত শ্রোতার জন্য পত্রিকা বা জার্নাল
লেখায় শব্দের পরিধি আরও বিস্তৃত হতে পারে।
৪. যতটা সম্ভব একক শব্দ
ব্যবহার করা: দ্বৈত বা দীর্ঘ বাক্যের পরিবর্তে একক এবং নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করা উচিত, যা মূল
বার্তা সরাসরি এবং সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করে। উদাহরণ: "ব্যবসায়িক কার্যক্রমে একটি নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে" এর পরিবর্তে
"নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে"।
৫. সামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দ
ব্যবহার:
বিভিন্ন
প্রেক্ষাপটে একধরনের ভাষা ব্যবহার করা উচিত যাতে পাঠক বা শ্রোতা বার্তার প্রতি
আস্থা রাখতে পারে। শব্দের ধরণ ও টোন যেন পুরো বার্তায় সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। উদাহরণ:
যদি আপনি একটি অফিসিয়াল প্রতিবেদন লেখেন, তবে এতে আনুষ্ঠানিক ভাষার ব্যবহার হবে,
কিন্তু একই প্রতিবেদনে অপ্রাসঙ্গিক হাস্যরস বা অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার
করা উচিত নয়।
৬. নেতিবাচক শব্দ এড়ানো: লিখিত যোগাযোগে নেতিবাচক
শব্দের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করা উচিত, কারণ তা পাঠকের মনোভাব বা প্রতিক্রিয়া
নেতিবাচক করতে পারে। পজিটিভ শব্দ ব্যবহার বার্তা আরও ইতিবাচক ও গ্রহণযোগ্য করে
তোলে। উদাহরণ: “এটা আপনি করতে পারবেন না” এর পরিবর্তে
“এটি এখনই সম্ভব নয়, তবে পরবর্তীতে চেষ্টা করা যেতে পারে”।
৭. অতিরিক্ত শব্দ এড়ানো: বিশেষত অফিসিয়াল বা পেশাগত
লেখায় অত্যধিক দীর্ঘ বা অপ্রয়োজনীয় শব্দের ব্যবহার রোধ করা উচিত। শব্দের অপচয়
বার্তার কার্যকারিতা কমাতে পারে। উদাহরণ: "তিনি অবশ্যই তার চিন্তা
প্রকাশ করেছিলেন এবং তার বক্তব্যের মাধ্যমে তার মতামত ব্যাখ্যা করেছিলেন" এর
পরিবর্তে "তিনি তার মতামত প্রকাশ করেছিলেন"।
৮. উপযুক্ত শব্দচয়ন: বার্তার উদ্দেশ্য, প্রেক্ষাপট
এবং শ্রোতার মনোভাব অনুযায়ী উপযুক্ত শব্দ চয়ন করা উচিত। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন
ধরনের ভাষা ব্যবহার করা দরকার। উদাহরণ: বিপদমুক্তি বা সতর্কতার ক্ষেত্রে
কঠোর ও শক্তিশালী ভাষা ব্যবহার করা উচিত, যেমন "এটা ভুল
করবেন না", কিন্তু অনুপ্রেরণামূলক বার্তায় ইতিবাচক ভাষা
ব্যবহার করা উচিত, যেমন "আপনি সফল হতে পারবেন"।
৯. উদাহরণ এবং উপমা ব্যবহার
করা: যখন কোনো বিষয় বা
ধারণা ব্যাখ্যা করতে হয়, তখন শ্রোতার বা পাঠকের জন্য উপযুক্ত উদাহরণ বা উপমা ব্যবহার
করা সহায়ক হতে পারে। এটি বার্তাকে আরও বোধগম্য এবং আকর্ষণীয় করে তোলে। উদাহরণ:
"এটি অনেকটা গাছের মতো—যেমন গাছ শিকড় থেকে শক্তি নেয়, তেমনি আমাদেরও মৌলিক মূলধন থেকে শক্তি পাওয়া উচিত।"
১০. নিরপেক্ষ ভাষার ব্যবহার: যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ ভাষা
ব্যবহার করা উচিত, বিশেষত যে বিষয়গুলো বিতর্কিত বা সমালোচনার শিকার হতে পারে।
এটি প্রতিটি পক্ষের অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। উদাহরণ:
"এই আইনি পরিবর্তনগুলির বিরুদ্ধে কিছু মতভেদ রয়েছে" এর
পরিবর্তে "এই আইনি পরিবর্তনগুলি নিয়ে কিছু আলোচনা চলছে"।
উপসংহার: লিখিত
যোগাযোগে সঠিক শব্দ নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা, যা
বার্তার স্পষ্টতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং প্রভাব বাড়ায়। শব্দের
সঠিক নির্বাচন পাঠক বা শ্রোতার কাছে বার্তা পৌঁছানোর ক্ষমতা এবং তাদের প্রতিক্রিয়া
নির্ধারণ করে।
বিকল্প উত্তর:
লিখিত যোগাযোগের শব্দ
নির্বাচনের উপায় কী কী? আলোচনা করুন।
লিখিত যোগাযোগে শব্দ নির্বাচন অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বার্তার স্পষ্টতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং
কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। সঠিক শব্দ নির্বাচন শ্রোতা বা পাঠকের কাছে বার্তা
সুস্পষ্ট ও অর্থপূর্ণ করে তোলে।
এখানে শব্দ নির্বাচনের কিছু কার্যকর উপায় আলোচনা
করা হলো:
১. সরল ও স্পষ্ট ভাষা ব্যবহার: সহজ ও
পরিষ্কার ভাষা ব্যবহার করুন, যাতে পাঠক সহজে বুঝতে পারে।
২. টেকনিক্যাল শব্দ কম ব্যবহার: টেকনিক্যাল
শব্দ শুধু তখন ব্যবহার করুন যখন পাঠক সে সম্পর্কে জানে।
৩. শ্রোতার স্তর অনুযায়ী ভাষা নির্বাচন: পাঠকের বয়স,
শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ভাষা নির্বাচন করুন।
৪. একক শব্দ ব্যবহার: দীর্ঘ
বাক্যের পরিবর্তে সরল এবং একক শব্দ ব্যবহার করুন।
৫. সামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দ ব্যবহার: বার্তার ভাষা
ও টোন সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখুন।
৬. নেতিবাচক শব্দ এড়ানো: নেতিবাচক
ভাষা কম ব্যবহার করুন, পজিটিভ শব্দ ব্যবহারে মনোভাব উন্নত
হয়।
৭. অতিরিক্ত শব্দ এড়ানো: অপ্রয়োজনীয়
শব্দ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৮. উপযুক্ত শব্দচয়ন: বার্তার
উদ্দেশ্য অনুযায়ী সঠিক শব্দ চয়ন করুন।
৯. উদাহরণ ও উপমা ব্যবহার: বিষয়টি
বোঝাতে উপমা বা উদাহরণ দিন।
১০. নিরপেক্ষ ভাষা ব্যবহার: বিতর্কিত
বিষয়গুলোতে নিরপেক্ষ ভাষা ব্যবহার করুন।
উপসংহার: লিখিত
যোগাযোগে সঠিক শব্দ নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা, যা
বার্তার স্পষ্টতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং প্রভাব বাড়ায়। শব্দের
সঠিক নির্বাচন পাঠক বা শ্রোতার কাছে বার্তা পৌঁছানোর ক্ষমতা এবং তাদের প্রতিক্রিয়া
নির্ধারণ করে।
সার্চ কী: লিখিত যোগাযোগের শব্দ নির্বাচনের উপায় , লিখিত যোগাযোগের
সংজ্ঞা কি? লৈখিক যোগাযোগ কী? যোগাযোগের লিখিত মাধ্যম কয়টি? লিখিত যোগাযোগের ৭টি উপাদান কি কি? লিখিত যোগাযোগ উপাদান সমূহ, লিখিত যোগাযোগের উদাহরণ, লিখিত যোগাযোগ বলতে কি
বুঝ, লিখিত যোগাযোগ মাধ্যম কোনটি, লিখিত যোগাযোগ কার্যকর করার উপায়, লিখিত যোগাযোগ কত প্রকার, লিখিত যোগাযোগের সুবিধা লিখ, লিখিত যোগাযোগ ও মৌখিক
যোগাযোগের পার্থক্য
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles